Saturday 24 February 2018

আমি এবং ভাষার মাস

আমি এবং ভাষার মাস

ফেব্রুয়ারি চলছে। মায়ের কোল খালি করা ফেব্রুয়ারি ,ঢাকা মেডিকেল চত্তর রাঙানো ফেব্রুয়ারি। ভাষার মাস। ইতিহাসটা সবারই জানা। নতুন করে বলার কিছু নেই। সেই বায়ান্ন সালের প্রলয়ংকরী প্রতিবাদ, মুখের ভাষার জন্য দুর্বার আন্দোলন আজও অমলিন। রাজপথের জমাট বাঁধা রক্ত কিংবা মায়ের দামাল ছেলের লাশ আজ নেই তবে আছে স্মৃতি সরূপ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। নুরূল আমিন সরকারের আমলের   সেই আন্দোলনের দিনটি আজ পেয়েছে আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি।

অনেক কথা লিখে ফেল্লাম ইতিমধ্যে। এবার নিজ অভিজ্ঞতা বলি। ভাষার মাসে একুশে ফেব্রুয়ারির তারিখটিই আমার কাছে প্রধান। কেননা দিনটি সরকারী ছুটি এবং শত অজুহাত স্বত্তেও বাবার আমাকে বই মেলায় নিয়ে যেতে হতোই। বলা বাহুল্য আমি একজন বইপ্রেমি। ছোটবেলায় বাসার আনাচে-কানাচে যত বই আছে খুঁজে বের করে পড়েছি। সেই আমি বইমেলায় যেয়ে এক অন্যরকম রাজ্যে হারিয়ে যেতাম। আব্বুর টাকা দিয়ে যদিও বই কেনা হতো, তবু আমি দুটো বই বাসায় এসে বাবা মাকে উপহার দিতাম। সর্বশেষ আমার বইমেলায় যাওয়া ষষ্ঠ কিংবা সপ্তম শ্রেণিতে। বাবা চলে যাওয়ার পর আর যাওয়া হয় নি বইমেলায় ^_^

তো যাই হোক বই মেলা প্রসঙ্গ ছেড়ে আসি সাহিত্যানুরাগের প্রতি। বাংলাদেশে যেহেতু জন্ম আমার সেহেতু বাংলা আমার রক্তে মিশে আছে। ইংরেজী ভাষায় লেখা সাহিত্যের চাইতে বাংলায় লেখা সাহিত্যই আমাকে বেশি টানে। কবিতা ততটা সেভাবে পড়া হয় নি যতটা উপন্যাস পড়েছি। কবিগুরুর শেষের কবিতা কিংবা নজরুল এর মৃত্যুক্ষুধার মত উপন্যাসের পাশাপাশি সমরেশ মজুমদার এর সাতকাহন বা শীর্ষেন্দু মুখপাধ্যায় এর দূরবীণ ও বাদ যায় নি।প্রতিটি ভাষার সাহিত্য নিঃসন্দেহে বিশাল। তাই প্রতিনিয়ত বৈশ্বিক ভাষা ইংরেজীর পাশাপাশি নিজ ভাষাকে শুদ্ধভাবে জানার ও শিখার চেষ্টা অব্যাহত রাখছি।

এবার আসি ভাষার উন্নয়ন এর কথায়। বাংলা ভাষা সাহিত্য দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। বইমুগ্ধ জনগোষ্ঠীর সংখ্যাটাও বিরাট। ঠিক অপরদিকে চলছে বাংলাকে অশুদ্ধ উচ্চারণ ও অপপ্রয়োগের মাধ্যমে বিকৃত করে দেয়ার। উদাহরণসরূপ: 'তুমি কেমন আছ?' এই বাক্যটি সামাজিক যোগাযোগ  মাধ্যমে গড়ে প্রতিদিন প্রায় বিশ লাখবার লেখা হয়। লেখা হোক, সেটি নিয়ে আমাদের সমস্যা নেই। তবে সেটি লেখা হয় : 'Tmi kmn aso?' এইভাবে। এইরকম বাংলা অক্ষর বাদ দিয়ে ইংরেজী অক্ষরে বাংলা লেখা, বাংলাকে বিকৃত করা মাত্র। উনিশ্শ বায়ান্ন সালে যখন উর্দু অক্ষরে বাংলা লেখার প্রস্তাব দিয়েছিল তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী তখন কিন্তু আমরা সেটা মেনে নেইনি। তবে কেন আজ আমরা নিজেরাই এভাবে নিজ ভাষা বিকৃত করার প্রচেষ্টায়?

হ্যাঁ অনেকেই হয়তো বাংলা কির্বোডে লেখতে পারে না কিংবা বাংলা কিবোর্ডই নেই! তারা গুগল অ্যাপস থেকে অভ্র বা রিদমিক কির্বোড নামিয়ে নিতেই পারেন। তাছাড়া যারা টাইপ করতে পারেন না তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনাদের বন্ধুবান্ধব বা নিকটাত্মীয় কারো কাছ থেকে শিখে নিন কিংবা ইউটিউব সার্চ বার এ ক্লিক করুন! এতকিছু বলার পর, আশা করি আমরা বাংলাকে বিকৃত করার চেষ্টা হত বিরত থাকবো।

বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা। বাংলা আমাদের অন্তরের তৃষ্ণার জল। যে জলে আমাদের বাগযন্ত্র সিক্ত হয়ে তৃপ্তি লাভ করে। ইউনেস্কো দ্বারা স্বীকৃত সবচেয়ে মধুর ভাষা হচ্ছে বাংলা। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই ভাষাকে বিকৃতি হতে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মায়ের পরই স্থান মাতৃভাষার সবশেষে মাতৃভূমি। এই তিনটি শব্দ একই সুতোয় গাঁথা। সবশেষে বলতে চাই:
      "আমি জন্মেছি বাংলায়,
            আমি বাংলায় কথা বলি,
               আমি এই বাংলার আলপথ দিয়ে
                    হাজার বছর চলি।"

No comments:

Post a Comment